
মোঃ এমাদ মিয়া:-নরসিংদী প্রতিনিধি
ইসলামি সভ্যতা বিকাশে মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অনেক অঞ্চলেই বিভিন্ন সময়ে শাসকদের হাত ধরে গড়ে উঠেছে নান্দনিক সব মসজিদ। ইসলামি স্থাপত্যকলা ও সৌন্দর্যময় মসজিদ গুলোর মধ্যে বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ অন্যতম। উক্ত মসজিদটি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলা সদরে অবস্থিত। উপজেলার বাজনাব ইউনিয়নের বীর বাঘবের গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সন্তান মাহমুদ ব্যাপারী নামে এক ধার্মিক ব্যক্তি নিজ জমিতে সাতটি গুম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি প্রায় ৩শ বছর পূর্বে নির্মাণ করেন। লোক মূখে শোনা যায় এই মসজিদের ভিতর থেকে অলৌকিকভাবে পবিত্র কুরআন তেলওয়াতের আওয়াজ শোনা যেতো। ফলে এই মসজিদটি ফজিলতের মসজিদ হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। উক্ত মসজিদে বেলাবো উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলা কুলিয়াচর, রায়পুরা, শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলা হতে শতশত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসে।প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জুম্মার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা ক্ষমতার বাইরে চলে যেত।মসজিদটিকে নান্দনিক নতুনরূপে সাজানোর পরিকল্পনা করেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা কৃতি সন্তান আব্দুল কাদির মোল্লা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মসজিদটি ২০০৬ সালে প্রায় ৪শত কোটি টাকা ব্যায়ে থার্মেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মোল্লার অর্থায়নে পুননির্মিত কাজ শুরু হয়। এবং ২০০৮ সালে মসজিদের পুননির্মাণ কাজটি শেষ হয়। বর্তমানে মসজিদের ধারণ ক্ষমতা ১২০০ হলেও জুম্মা কিংবা রমজান মাসে উক্ত ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুন মুসল্লির সমাগম ঘটে। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মসজিদটিতে ইসলামিক স্থাপত্যের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। বিশাল গম্বুজ, উঁচু মিনার, সুন্দর কারুকার্য এবং প্রশস্ত প্রাঙ্গণ মসজিদটিকে একটি অনন্য রূপ দান করেছে।সামনের অংশে পুকুর এবং দক্ষিন পাশে এতিমখানা মাদ্রাসা মসজিদকে দিয়েছে পরিপূর্ণ। বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিটি শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থাপনাই নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। এখানে নিয়মিত ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্ম প্রচারে প্রদান করা হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড, যেমন দরিদ্রদের সাহায্য,অসহায়দের পুনর্বাসন ইত্যাদি কার্যক্রম এই মসজিদ থেকে পরিচালিত হয়।
মসজিদটির স্থাপত্য সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এই মসজিদ দেখতে আসেন। এছাড়াও, মসজিদটি উয়ারী বটেশ্বরের মতো ঐতিহাসিক স্থানের নিকটবর্তী হওয়ায় পর্যটকদের জন্য এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।এর নির্মাণশৈলী প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যের চার খিলান কাঠামো মেনে তৈরি, যা এই মসজিদের বিশাল গম্বুজকে টিকে থাকার ব্যাপারে সুরক্ষা দিয়েছে।সম্প্রতিক গত ২৮ মার্চ শুক্রবার মসজিদের উন্নয়ন, প্রশাসনিক ভবন ও লেক গার্ডেন ড্রাইভওয়ে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম বলেন, ইসলামি স্থাপত্যকলা ও সৌন্দর্যময মসজিদ গুলোর মধ্যে বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর।এই মসজিদটি ফজিলতের মসজিদ হিসেবে ও এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে। মসজিদের উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। মনোমুগ্ধকর নির্মাণ শৈলীতে কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি।
Leave a Reply